আসগর সালেহী, ব্যুরোচীফ চট্টগ্রাম।
উত্তর চট্টগ্রাম ও দুই পার্বত্য জেলার স্বাস্থ্যসেবায় যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে হাটহাজারীতে প্রস্তাবিত ‘চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতাল’। পাঁচ শতাধিক শয্যার এ আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ হলে উন্নত চিকিৎসা সুবিধার দীর্ঘদিনের অভাব দূর হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অবকাঠামোগত উন্নয়নে এগিয়ে গেলেও উত্তর চট্টগ্রামের চিকিৎসা খাতে সেভাবে আধুনিকায়ন হয়নি। এখনও এই অঞ্চলের প্রায় অর্ধকোটি মানুষ জটিল চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কিংবা নগরীর বেসরকারি হাসপাতালে যেতে বাধ্য হন। যানজট, বেড সংকট ও ব্যয়বহুল চিকিৎসার যন্ত্রণায় নাকাল মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারগুলো।
গত বছরের অক্টোবরে এমনই এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন ফটিকছড়ির দক্ষিণ নিশ্চিন্তাপুরের প্রবাসীর স্ত্রী ঝর্ণা আক্তার (ছদ্মনাম)। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত দশ মাসের পুত্র সন্তান মোহাম্মদ আইমানকে নিয়ে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলেও অবস্থার অবনতি হলে রেফার করা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেও বেড না পেয়ে শেষমেশ বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে প্রায় ৬৯ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়। এমন অভিজ্ঞতা এখানকার বহু পরিবারের।
এ প্রেক্ষাপটে হাটহাজারীতে ৫০০ শয্যার এই হাসপাতাল নির্মাণকে স্বাগত জানিয়েছেন পার্শ্ববর্তী রাউজান, ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া, সীতাকুণ্ড ও দুই পার্বত্য জেলার সাধারণ মানুষ।
গত শনিবার (২৬ এপ্রিল) হাটহাজারী পৌরসভার মিঠাছড়া ও ফটিকা বিল এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণের সম্ভাব্য জায়গা পরিদর্শন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম। তিনি বলেন, “এই হাসপাতাল নির্মিত হলে শুধু হাটহাজারী নয়, পার্শ্ববর্তী দুই পার্বত্য জেলা ও পাঁচ উপজেলার মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।”
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আইন উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকে এই অঞ্চলে কোনো বড় সরকারি হাসপাতাল হয়নি। চীন সরকারের সহায়তায় এমন একটি আধুনিক হাসপাতাল হলে মধ্যবিত্ত-দরিদ্র মানুষ উপকৃত হবে। পাশাপাশি শহরের চাপও কমবে।”
সাউদার্ন মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. জসিম উদ্দিন বলেন, “উত্তর চট্টগ্রামে প্রায় অর্ধকোটি মানুষের চিকিৎসা সুবিধার অভাব রয়েছে। ক্যান্সার, হৃদরোগসহ জটিল রোগের চিকিৎসায় রোগীদের ঢাকায় কিংবা ভারতে যেতে হয়। এই হাসপাতাল হলে স্বাস্থ্যসেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম মশিউজ্জামান জানান, “হাসপাতাল নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ১০-১২ একর সরকারি জমি আমাদের রয়েছে। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সম্ভাব্য জায়গা পরিদর্শন করেছেন। সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এটি বাস্তবায়নে আগ্রহী।”
উল্লেখ্য, হাসপাতাল নির্মাণের স্থান নির্ধারণের জন্য হাটহাজারীর মিঠাছড়া, ফটিকা বিল এবং চিকনদন্তী এলাকায় সরকারি জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রত্যাশা— দ্রুত কাজ শুরু হলে উত্তর চট্টগ্রামবাসীর বহুদিনের স্বাস্থ্যসেবার অভাব পূরণ হবে।