মো: জিহাদ হোসেন
উপজেলা প্রতিনিধি মতলব উত্তর চাঁদপুর।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা ধনাগোদা নদীতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ষাটনল, থেকে কালির বাজার পর্যন্ত দীর্ঘ ৫ কিলোমিটার অঞ্চল হুমকির মুখে। এ কারণে কালিপুর বাজার, খাগুরিয়া, হাপানিয়া, নবীপুরসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি এলাকায় ধনাগোদা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই ভাঙনের ফলে হুমকির মুখে পড়ছে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প, কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, হাসপাতাল, মসজিদ, মাদ্রাসা, বসতবাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা। পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলা ও মুন্সিগঞ্জ জেলা সীমানাভুক্ত। গত কয়েক বছর আগে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দেওয়া হলে ওই ইজারদারা মতলব উত্তর সিমানায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে করে। ফলে উপজেলা মেঘনা -ধনাগোদা নদীর তীরে অবস্হিত পশ্চিম লালপুর, ষাটনল খাগুরিয়া, চন্দ্রাকান্দি, গোপালকান্দি, কালিপুর বাজার, খাগুরিয়া, হাপানিয়া, নবীপুরসহ এলাকার স্হানগুলো ধসে যাচ্ছে। এতে আতঙ্কে রয়েছে স্হানীয় বাসিন্দারা।
জানা যায়, ষাটনল সংলগ্ন মেঘনা নদী থেকে ধনাগোদা নদীর প্রবেশ মুখের চরকালিপুরা ও ষোলআনী এলাকা মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে চলতি বছরে চলতি মাসে আবারো বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দিচ্ছে। যা মতলবের সীমানা ঘেঁষা হওয়ায় ষাটনল, কালিপুর, বেলতলীসহ বেশ কিছু অঞ্চলে নদী ভাঙনের ক্ষেত্রে আরও বেশি হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে জানান স্হানীরা।
সরজমিন দেখা যায়, অবৈধ বালু উত্তলনের কারণে মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা ও ধনাগোদা নদীর মোহনার ষাটনলের কয়টি অঞ্চলে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ভাঙনকবলিত এই ৫ কিলোমিটার অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে ৩০-৩৫টি ড্রেজার দিয়ে দিনে-রাতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হয়ে আসছে। মাঝে মাঝে প্রশাসনিক তৎপরতা থাকলে দিনের বেলায় কখনো কখনো বালু উত্তোলন বন্ধ থাকলেও রাতের বেলা সশস্ত্র পাহারায় এই নদী থাকে প্রভাবশালী বালু উত্তোলনকারীদের দখলে। এই তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা তো দূরের কথা এ অঞ্চলের মানুষরা তাদের বিষয়ে কথা বলতে পর্যন্ত ভয় পায়।
স্হানীয়রা অবৈধ বালুকাটার প্রতিবাদে মতলব উত্তর থানার সামনে গত ২৯শে ডিসেম্বর সকালে একটি মানববন্ধনের ডাক দিলে অদৃশ্য প্রভাবে স্থগিত করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন জানান, নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের আধিপত্যকে কেন্দ্র করে গত বছরের ২২শে অক্টোবর সকালে অবৈধ বালু উত্তোলনকারী ও নৌ ডাকাত সরদার বাবলা বাহিনীর প্রধান বাবলা (৪২)কে ফিল্মি স্টাইলে খুন করা হয়। ফলে এখন এই অঞ্চলের অবৈধ বালু উত্তোলন গজারিয়ার গুয়াগাছিয়ার একটি বিশেহ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।
ষাটনল ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদাউস আলম জানান, অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে ষাটনল ইউনিয়নের ষাটনল, কালিপুরসহ কয়েকটি অঞ্চলে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মিয়া মঞ্জুর আমীন স্বপন জানান, ইতিমধ্যে অনেক পরিবার জমি হারিয়ে পথে বসেছে। কখন যে নদী ভেঙে আমাদের ঘরবাড়ি, স্কুল, মসজিদ, হাট-বাজার, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যায় এ নিয়ে আমরা আতঙ্কে আছি। এমনকি মেঘনা ধনাগাদা বেড়িবাঁধটিও ঝুঁকিতে রয়েছে। এ বিষয়ে মেঘনা ধনাগোদা পানি ফেডারেশনের সভাপতি রাসেল ফয়েজ আহমেদ চৌধুরী শহীন জানান, অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে দেশের ২য় বৃহৎ ধনাগোদা সেচ প্রকল্প আজ হুমকির মুখে।
পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সেলিম শাহেদ বলেন, কয়েকটি অঞ্চলে ভাঙন দেখা দিলে আমরা তাৎক্ষণিক প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেই। তবে নদীর তীর ও সেচ প্রকল্প বাঁধ রক্ষায় ধনাগোদা নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের বিষয়ে আমরা লিখিত অভিযোগ জানাবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা কুলসুম মণি বলেন, অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। কোন ব্যক্তি নদী বালু উত্তোল করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।