1. dailyjagratasangbad@gmail.com : দৈনিক জাগ্রত সংবাদ : দৈনিক জাগ্রত সংবাদ
  2. info@www.dailyjagratasangbad.com : দৈনিক জাগ্রত সংবাদ :
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
গাজীপুরের শ্রীপুরে অগ্নিকাণ্ড সরিষাবাড়ী’র ভাটারা ইউনিয়নে বিট পুলিশিং সভা অনুষ্ঠিত রামদায়ের কোপে সাবেক সেনা সদস্য – রক্তাক্ত জখম নোয়াখালী হাতিয়ায় আওয়ামীলীগ নেতাদের অর্থের বিনিময়ে বিএনপিতে যোগদান গোমস্তাপুরে “সুজন- সুনাগরিকের জন্য নাগরিক ” সংগঠন এর আলোচনা ও দ্বিবার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত। ঝিনাইদহ ডাকবাংলা আঃ রউফ ডিগ্রি কলেজের মসজিদের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন মতলব উত্তর থানায় ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠিত ১৫ ঘন্টা পর চকবাজারে নিখোঁজ শিশু উদ্ধার। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নিজের শিশু মেয়েকে (১১) ধর্ষণের অপরাধে গ্রেপ্তার বাবা বান্দরবানে লামায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে শেষ হলো মারমা সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ সামাজিক উৎসব সাংগ্রাই। জয়দেবপুর থানায় অর্থের বিনিময়ে মিথ্যা তথ্যে ধর্ষণ মামলা নেয়ার অভিযোগে ভুক্তভোগীর সংবাদ সম্মেলন

দাফনের সুন্নাত পদ্ধতি: করণীয় ও গোরস্তানের পবিত্র রক্ষায় ইসলামের নির্দেশনা

  • প্রকাশিত: সোমবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১০ বার পড়া হয়েছে

 

মাওলানা আসগর সালেহী

 

মানুষ মারা গেলে তাকে সম্মানের সঙ্গে দাফন করা ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে ফরজ। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন:
“প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে”
(সূরা আল-ইমরান, আয়াত ১৮৫)।
আর হাদিসে মৃতদের তাড়াতাড়ি দাফনের নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

মৃতদের দাফনের ধর্মীয় দায়িত্ব: মুসলিম সমাজের ওপর ফরজ কিফায়া হিসেবে মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া, জানাজা পড়া ও দাফন করার বিধান রয়েছে। এটি পালন করলে সমগ্র সমাজ দায়িত্বমুক্ত হয়, না করলে সবাই গোনাহগার হয়। যদি কোথাও মাটি না থাকে, তবে শরিয়তের অনুমতি অনুযায়ী মৃতদেহ সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া যায়—তবুও যথাসম্ভব দাফনের সুন্নত পদ্ধতি রক্ষা করতে হবে।

নৈতিক ও মানবিক দিক: মৃত ব্যক্তির প্রতি সম্মান দেখানো মানবিকতা ও শালীনতার পরিচায়ক। মৃত্যুর পর একজন মানুষ কথা বলতে পারে না, নিজের মর্যাদা রক্ষা করতে পারে না—তাই জীবিতদের দায়িত্ব তার জন্য তা নিশ্চিত করা।

সামাজিক দায়িত্ব: মৃতের পরিবার ও স্বজনরা শোকাহত অবস্থায় থাকে। সমাজের সদস্যদের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো, দাফনে সহায়তা করা এবং সমবেদনা জানানো। এতে সামাজিক বন্ধন আরও দৃঢ় হয়।

আমাদের সমাজে সাধারণত দেখা যায়, কোন মৃতকে কবরস্থ করার জন্য গোরস্থানে নিলে সেখানে আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীরা সবাই দলবদ্ধভাবে গোরস্থানে যায়। যেখানে পূর্ব থেকে অনেক কবর থাকে। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় অনেকে উদাস হয়ে কবরের উপরে হাঁটাচলা করে, খানাপিনা এমন কি পান সিগারেট পান করে। এইটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ।

কবরস্থানের সম্মান রক্ষার বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা:
ইসলাম কবরস্থানকে মর্যাদাপূর্ণ স্থান হিসেবে গণ্য করে। এটি শুধুই মৃতদের আবাস নয়, বরং জীবিতদের জন্য স্মরণ, শিক্ষা ও পরকাল ভাবনার স্থান। রাসুলুল্লাহ (সা.) কবরস্থানে জুতা পায়ে হাঁটা বা অবমাননার আচরণকে নিরুৎসাহিত করেছেন।

কবরের ওপর হাঁটাচলা করা: রাসুল (সা.) বলেছেন: “তোমাদের কেউ যেন কবরের উপর বসে না, কিংবা হাঁটেও না, কেননা কবরের ওপর বসা, তা যেন আগুনে বসার মতো।” (ইবনে মাজাহ)

জুতা পায়ে প্রবেশ: কবরস্থানে প্রবেশের সময় জুতা খোলা উত্তম, বিশেষ করে কবরের পাশ দিয়ে চলাচলের সময়। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) এক সাহাবিকে কবরস্থানে জুতা পায়ে হাঁটতে দেখে জুতা খুলে ফেলতে বলেন। (আবু দাউদ)

পবিত্রতা বজায় রাখা: নাপাক অবস্থায় কবরস্থানে যাওয়া অনুচিত। মৃতদের প্রতি সম্মান, ওজু বা পবিত্রতার মাধ্যমে করা উচিত। এটি দোয়া ও মাগফিরাতের গুরুত্ব বোঝায়।

কবরের ওপর গাছ লাগিয়ে ব্যবসা করা:
ইসলাম মৃতদের কবরকে সম্মানের চোখে দেখে। তাই কবরের ওপর গাছ লাগিয়ে তা দিয়ে ব্যবসা করা অনুচিত ও অশোভনীয় কাজ। এটি মৃতের সম্মানহানি ও কবরস্থানের পবিত্রতা নষ্ট করে।

হাদিসে কবরের ওপর গাছ রাখার বিষয়:
একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) দুইটি কবরের পাশ দিয়ে যেতে যেতে বলেছিলেন—
“এই দুজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, তবে বড় কোনো গুনাহের কারণে নয়।”
এরপর তিনি একটি কচি ডাল কেটে দুই ভাগ করে প্রতিটি কবরের ওপর একটি করে গেঁথে দিলেন। বললেন—
“সম্ভবত এগুলো শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত তাদের শাস্তি কিছুটা লাঘব হবে।” (বুখারি)

এই হাদিসের উদ্দেশ্য ছিল কবরবাসীর জন্য দোয়া ও রহমতের ব্যবস্থা। কিন্তু এটিকে ব্যবসায়িকভাবে ব্যবহার করা শরিয়তসম্মত নয়।

ফিকাহবিদদের অভিমত: ইসলামি ফিকাহ অনুযায়ী, কবরের জায়গা হলো ওয়াকফ, এটি ব্যক্তিগত মালিকানায় নেওয়া বা ব্যবহার করা জায়েয নয়। ফলে সেখানে গাছ লাগিয়ে ফল, ফুল বা কাঠ বিক্রি করা অবৈধ উপার্জনের শামিল।

ইসলামে মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের আমল থেকে জানা যায় যে, মৃত ব্যক্তিকে দাফনের ক্ষেত্রে কিছু সুন্নাত পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত। পাশাপাশি দাফনের পর কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে, যা মৃতের জন্য উপকারী।

দাফনের সুন্নাত পদ্ধতি:
১. জানাজা শেষে দ্রুত দাফন:
রাসুল (সা.) বলেছেন: “তোমরা মৃত ব্যক্তির দাফনে দ্রুত করো।” (বুখারি)

কবর খননের ইসলামী শরিয়তে পদ্ধতি মূলত দুইটি। এই দুটি পদ্ধতির মধ্যে যেটি স্থানীয় পরিবেশ, মাটি ও নিরাপত্তার দিক দিয়ে উপযুক্ত, সেটিই গ্রহণযোগ্য।

ক. লাহাদ (اللحد) পদ্ধতি
মুল কবর গর্তটি খুঁড়ে কিবলামুখী দেয়ালের পাশে একটি কোটর বা গহ্বর তৈরি করা হয়। মৃতদেহকে সেখানে রাখার পর ইট বা মাটি দিয়ে সেই কোটর ঢেকে দেওয়া হয়, তারপর মূল গর্ত পূর্ণ করা হয়।

এই পদ্ধতির বিশেষতা:
কিবলামুখী হওয়া সহজ হয়
মৃতদেহ ভালোভাবে নিরাপদ থাকে
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দাফন এই পদ্ধতিতেই হয়েছিল। (তিরমিজি)

খ. শাক্ক (الشق) পদ্ধতি
মাটি খুঁড়ে নিচে মাঝখানে একটি গভীর খণ্ডিত গর্ত তৈরি করা হয়, যাতে মৃতদেহ রাখা হয়। তারপর তার চারপাশে মাটি বা কাঠের স্লাব দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।

এই পদ্ধতির বিশেষতা:
যখন মাটি নরম হয় বা লাহাদ তৈরি করা সম্ভব না হয়, তখন এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। সাহাবায়ে কেরামও প্রয়োজনে এটি ব্যবহার করেছেন

৩. মৃতকে কবরে কিবলামুখী করে রাখা:
হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) মৃতকে কাত করে কিবলামুখী করে কবর দেন (আবু দাউদ)। মৃতের মুখ যেন কিবলার দিকে থাকে, সে দিকটি নিশ্চিত করতে হয়।

৪. ‘বিসমিল্লাহি ও আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ’ বলা: মৃতকে কবরে রাখার সময় এ দোয়া পাঠ করা সুন্নত: “بِسْمِ اللَّهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُولِ اللَّهِ”
অর্থ: আল্লাহর নামে এবং রাসুলুল্লাহর দ্বীন অনুযায়ী। (তিরমিজি)

৫. মাটি দেওয়া: কবরস্থ করার পর হাতে তিনবার মাটি দেওয়া সুন্নত।
প্রথম মাটি দেয়ার সময় বলবে: “مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ” দ্বিতীয়বার দেওয়া সময় বলবে: “وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ”
তৃতীয়বার দেওয়ার সময় বলবে: “وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَى” (সূরা ত্বহা: ৫৫)
তারপর নিয়ম অনুযায়ী মাটি দিয়ে ভালো করে কবর বন্ধ করবে।

৬. সূরা বাকার আয়াত পড়ার বিধান:
কবর দেওয়ার পর কবরের পাশে সূরা বাকারা থেকে কিছু আয়াত পাঠ করার একটি প্রমাণ সাহাবায়ে কেরামের আমল থেকে পাওয়া যায়। হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে—
“তিনি কবর দেওয়ার পর কবরের মাথার দিকে সূরা বাকারা’র শুরু এবং পায়ের দিকে শেষ অংশ পাঠ করতেন।” (বায়হাকি)

এই আমল সরাসরি রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে প্রমাণিত না হলেও সাহাবিদের আমল হওয়ায় ফুকাহায়ে কেরাম এটি মুস্তাহাব বা ভালো কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মূল উদ্দেশ্য হলো—মৃতের জন্য দোয়া, রহমতের আহ্বান এবং কবরের শান্তি কামনা করা।

কবরের ওপর খেজুরের ঢাল ও পানি ছিটানো:
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এক হাদিস থেকে জানা যায়, তিনি একবার দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলেছিলেন—“এই দুজনকে আজাব দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু বড় কোনো কারণে নয়।” এরপর তিনি একটি খেজুর ডাল কেটে দুই ভাগ করে প্রতিটি কবরের ওপর একটি করে গেঁথে দেন এবং বলেন: “এটি শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত হয়তো তাদের আজাব কিছুটা লাঘব হবে।” (সহীহ বুখারি)

ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, এতে কবরের ওপর গাছ বা সবুজ কিছু থাকলে, তা আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করে এবং মৃতের জন্য রহমতের কারণ হতে পারে। এ থেকেই অনেকে কবরের ওপর পানি ছিটিয়ে সবুজ রাখা ও ঠান্ডা রাখার আমল করে থাকেন। তবে খেয়াল রাখতে হয়, এতে যেন অপচয়, লোক দেখানো কাজ বা বিদআতের অবকাশ না থাকে।

হাদিসের ভিত্তি: জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, “রাসুলুল্লাহ (সা.) তার পুত্র ইব্রাহিমকে দাফন করে কবরের উপর পানি ছিটিয়েছেন।”
(ইবনে মাজাহ)

এই আমলের উদ্দেশ্য:
– কবরের মাটি শক্ত ও স্থির রাখা
– কবরকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা
– এক ধরনের আদব ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা

৭. দোয়া ও ইস্তেগফার করা: দাফনের পর রাসুল (সা.) কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বলতেন: “তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং তার জন্য স্থিরতা চাও, কেননা এখন তাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে।” (আবু দাউদ)

দাফনের পরে করণীয় আমলসমূহ:
১. কবরের পাশে কিছু সময় দাঁড়িয়ে মৃতের জন্য দোয়া ও মাগফিরাত চাওয়া।

২. সদকা করা, মৃতের পক্ষ থেকে নফল নামাজ, রোজা ও হজ আদায় করা। হাদিসে আছে, কেউ যদি মৃতের পক্ষ থেকে সদকা করে, তা তার উপকারে আসে (বুখারি)।

৩. কবর জিয়ারত করা: রাসুল (সা.) বলেছেন: “তোমরা কবর জিয়ারত করো, তা তোমাদেরকে আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।” (মুসলিম)।

৪. মৃতের ঋণ বা দেনা পরিশোধ করে দেওয়া: রাসুল (সা.) দাফনের পর মৃতের দেনা সম্পর্কে খোঁজ নিতেন এবং তা পরিশোধে উৎসাহিত করতেন।

দাফন ও পরবর্তী করণীয় কাজগুলো ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। এগুলো কেবলমাত্র মৃতের প্রতি দায়িত্ব পালনই নয়, বরং জীবিতদের জন্যও স্মরণীয় শিক্ষা। কোরআন ও হাদিসভিত্তিক এই সুন্নাতসমূহ অনুসরণ করলে একজন মুসলমান মৃত্যুর পরও সম্মানিত থাকেন এবং আখিরাতে মুক্তির আশায় উপকৃত হন।

লেখক: মাওলানা আসগর সালেহী
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।
ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট