মোঃ সৈকত হোসেন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
গৌরীপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)- এম সাজ্জাতুল হাসানের সাথে গতকাল মঙ্গলার (১৮ মার্চ ২৫) আলোচনা শেষে সোয়াই নদী খনন কাজে বাধা না থাকার নিশ্চয়তা পাওয়ার পরও সেনাবাহিনী আন্দোলনকারী সাধারণ জনগণের উপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই ঘটনায় শ্যামগঞ্জজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে এবং জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল রাতে সেনাবাহিনী নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিচার্জ করে ও শারীরিক নির্যাতন চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। নারী, শিশু ও প্রবীণরাও এই হামলার শিকার হয়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে চালানো হয়েছে।
সোয়াই নদী রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক সৈয়দ এসএম ঋজু বলেন,”আমরা নদী রক্ষার জন্য লড়াই করছি, দেশ ধ্বংসের জন্য নয়। অথচ আমাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় বাহিনী লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে! সেনাবাহিনী কাদের স্বার্থে রাতের অন্ধকারে আমাদের ওপর হামলা চালালো? এই প্রশ্নের জবাব চাই!”
তিনি আরও বলেন, “এই হামলা প্রমাণ করেছে, শাসকশ্রেণি আমাদের কণ্ঠরোধ করতে চায়। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কেউ টিকে থাকতে পারেনি। আমরা সোয়াই রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাব। যদি আমাদের রক্ত দিতে হয়, তবু এই নদী আমরা রক্ষা করব!”
সচেতন শ্যামগঞ্জবাসীর সদস্য সচিব অর্ক দত্ত এই বর্বর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন,
“গৌরীপুর ইউএনও এম সাজ্জাতুল হাসানের সাথে আমাদের আলোচনা হয়েছিল।
তিনি স্পষ্ট করে বলেছিলেন, কাজ চালিয়ে যেতে কোনো বাধা নেই। তাহলে সেনাবাহিনী কেন হামলা চালালো? কেন রাতের অন্ধকারে নিরস্ত্র জনগণের উপর রাষ্ট্রীয় বাহিনী লেলিয়ে দেওয়া হলো? এটা কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রের চিত্র হতে পারে না!”
তিনি আরও বলেন,
“আমরা স্বৈরাচারের দুঃশাসন দেখেছি, দেখেছি কীভাবে রাষ্ট্রীয় বাহিনী জনগণের কণ্ঠরোধে লেলিয়ে দেওয়া হয়। এই হামলা আমাদের সেই ভয়াল স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট আমাদের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য তোফাজ্জল বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন নতুন রাষ্ট্রের স্বপ্ন নিয়ে। আজ সেই স্বপ্নের বুকে সেনাবাহিনীর বুটের লাথি পড়লো! এটা কি স্বাধীনতা? এটা কি গণতন্ত্র?”
“আমরা স্পষ্ট বলে দিতে চাই— জনগণ কখনোই মাথা নত করেনি, করবেও না! এই হামলার জবাব জনগণ দেবে, এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে শ্যামগঞ্জজুড়ে প্রতিরোধ গড়ে উঠবে।
সাইনবোর্ড পেইন্টার মামুন বলেন,
“আমি রাজনীতি করি না, শুধু কাজ করি। কিন্তু আমাকেও ওরা ছাড়লো না! যখন আমরা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করছিলাম, তখন হঠাৎ করে সেনাবাহিনী এলো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পিটিয়ে আমার হাত ভেঙে দিল! এখন আমি কীভাবে কাজ করব? কীভাবে সংসার চালাব?””আমার দোষ কী? নদী রক্ষা করা কি অপরাধ? এই অন্যায়ের বিচার চাই!”
রিকশা চালক লালচান হামলার শিকার কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন,”আমি দিনরাত রিকশা চালাই, নদী রক্ষার আন্দোলনে শুধু দাঁড়িয়েছিলাম, কারণ এই নদী মরলে আমরা মরবো! কিন্তু ওরা আমাদের মানুষ মনে করলো না! লাঠির আঘাতে আমার পিঠে দাগ পড়ে গেছে, ব্যথায় হাঁটতে পারছি না। কিন্তু আমার কষ্টের চেয়েও বেশি কষ্ট লাগছে এই অন্যায় দেখে।”
“আমরা গরিব মানুষ, আমাদের কোনো মূল্য নেই কি? আমাদের ওপর লাঠি চালিয়ে তারা মনে করছে আমরা থেমে যাব? না! এই লড়াই আমরা থামাবো না!”
২০২৪ সালের ৪ আগস্ট বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো সোয়াই আন্দোলনের অন্যতম নেতা তোফাজ্জল বলেন,
“আমি জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছিলাম এই বিশ্বাসে যে, আমরা একদিন সত্যিকার স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ব! কিন্তু আজ দেখছি, সেই স্বপ্নের ওপরই বুটের লাথি মারা হচ্ছে! আমার শরীরের প্রতিটি ক্ষত আমাকে মনে করিয়ে দেয়, এই রাষ্ট্র এখনও শোষকদের দখলে।”
তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমি কি ভুল করেছিলাম? আমি কি অন্যায় করেছিলাম? আমি শুধু একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম— যেখানে জনগণ ন্যায়ের সাথে বাঁচবে। কিন্তু আজকের এই রক্তাক্ত রাতে আমার সেই স্বপ্নের বুকেই ছুরির ঘা বসানো হলো!”
“আমি জানি, এই রক্ত বৃথা যাবে না। আমাদের সংগ্রাম থামবে না। সোয়াই রক্ষার লড়াই শুধু নদীর লড়াই নয়— এটা জনগণের লড়াই! শাসকেরা মনে রেখো, তোমাদের পতন নিশ্চিত!”
সচেতন শ্যামগঞ্জবাসীর প্রেস সচিব ইয়াসিন আরাফাত বলেন,
“প্রশাসন যদি ভাবে, জনগণ ভয় পেয়ে যাবে, তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। এই হামলার মধ্য দিয়ে তারা তাদের আসল চেহারা উন্মোচিত করেছে। আমরা জনগণের কণ্ঠরোধ হতে দেব না। এই অন্যায়ের জবাব রাস্তায়, আন্দোলনের ময়দানে দেওয়া হবে!”
তিনি আরও বলেন, “সোয়াই বাঁচাতে আমরা শেষ পর্যন্ত লড়বো। প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর এই দুঃসাহসের জবাব দিতে আমরা আরও সংগঠিত হবো। এটা শুধু শুরু— লড়াই এখনো বাকি!”
সরকারের পক্ষ থেকে এখনও এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি। কেন সেনাবাহিনী সাধারণ জনতার উপর হামলা চালালো, কেন ইউএনও’র আশ্বাসের পরও এই নিপীড়ন চালানো হলো— এসব প্রশ্নের উত্তর প্রশাসন দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সোয়াই নদী রক্ষার আন্দোলন শুধু পরিবেশ রক্ষার লড়াই নয়, এটি রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে এক প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠছে। সরকার যদি জনগণের কণ্ঠরোধ করতে চায়, তাহলে এই আন্দোলন আরও ব্যাপক আকার ধারণ করবে।
সোয়াই নদী রক্ষার দাবিতে আন্দোলনরত জনগণ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন— এই হামলা তাদের দমাতে পারবে না, বরং আন্দোলন আরও শক্তিশালী হবে।
“যদি কেউ মনে করে, রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন চালিয়ে আমাদের থামিয়ে দেবে, তাহলে তারা ইতিহাস ভুলে গেছে! সংগ্রাম চলছে, সংগ্রাম চলবে! সোয়াই নদী রক্ষার লড়াই এই বর্বরতার জবাব দেবে!” বলেন অর্ক দত্ত।
শ্যামগঞ্জ মইলাকান্দা গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন খান সুপল্বব বলেন,পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাতে হামলা করেছিল,আজ দেশের সেনাবাহিনীও রাতের আধারে জনগণের উপর হামলা চালায়।
পাকবাহিনী ও দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রার্থক্য কোথায়?
তিনি বলেন,সেনা বাহিনীর এই নগ্ন হামলায় শ্যামগঞ্জের জনগণ এখন আরো ঐক্যবদ্ধ।
আমাদের নদী খননের যৌক্তিক
আন্দোলনের বিজয় হবে
পরাজিত হবে ভূমি খেকো দস্যুরা।