মোঃ সৈকত হোসেন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
শ্যামগঞ্জ বাজার সংলগ্ন সোঁয়াই নদী রক্ষার আন্দোলনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেছে দখলদার গোষ্ঠী।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে তিলক রায় টুলু নামের এক ব্যক্তি
পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেন, যেখানে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট,উদ্দেশ্য প্রণীত ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়।
অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়, সোঁয়াই নদীর তীরবর্তী কিছু ব্যক্তি অবৈধভাবে তার জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে এবং তাকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে এবং তাদের প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়া হয়েছে বিগত সময়ে,অথচ দেখা গিয়েছে দোকানদারদের ভূল বশত কারণে শটসার্কিট থেকে আগুন লাগার সূত্র পাত হয়েছিল এই বলে নিউজ হয়েছিল সব জাতীয় পত্রিকা ও ইলেকট্টনিকস মিডিয়াই।
বাস্তবতা হলো, সোঁয়াই নদীকে রক্ষার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে এবং প্রশাসনের নির্দেশেই নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করার কাজ এগিয়ে চলেছে।
আন্দোলনকারীরা বরাবরই দাবি করে আসছিলেন যে, নদী দখলমুক্ত করতে প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু যখন আন্দোলন জনসমর্থন লাভ করতে থাকে এবং প্রশাসন পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেয়, তখনই কিছু স্বার্থান্বেষী মহল আন্দোলনকারীদের নামে মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে তাদের বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চালায়।
পরিস্থিতি পরিষ্কার হয়ে যায় ৫ মার্চ ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে। প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এই গণশুনানিতে নদী রক্ষা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ জনগণ উপস্থিত থাকলেও অভিযোগকারী তিলক রায় টুলু ও তার সহযোগীরা আসেননি।
এই অনুপস্থিতির মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, তাদের অভিযোগ ছিল সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। প্রকৃতপক্ষে, তারা প্রশাসনের দৃষ্টি অন্যদিকে সরানোর অপচেষ্টা চালিয়েছিল, যাতে অবৈধভাবে নদী দখল অব্যাহত রাখা যায়।
গণশুনানির পর প্রশাসন তিন কার্যদিবসের মধ্যে সোঁয়াই নদীর খনন কাজ শুরুর ঘোষণা দেয়। ইউএনও স্পষ্টভাবে বলেন, "নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যদি কেউ খনন কাজে বাধা সৃষ্টি করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
আন্দোলনকারীদের প্রতিক্রিয়া
সোঁয়াই নদী রক্ষার আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক অর্ক দত্ত বলেন, "আমরা প্রথম থেকেই জানতাম, দখলদাররা মিথ্যা অভিযোগ করে আমাদের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতে চাইবে। কিন্তু জনগণের শক্তির কাছে তাদের ষড়যন্ত্র ধসে পড়েছে। প্রশাসনও বুঝতে পেরেছে, কারা সত্যিকারের পরিবেশ রক্ষার পক্ষে এবং কারা নিজেদের স্বার্থে মিথ্যাচার করছে।
তিনি আরও বলেন,এখন আমরা চাই প্রশাসন তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দ্রুত নদী খনন কাজ শুরু করুক এবং অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিক।"
গণশুনানির পর থেকে এলাকায় স্বস্তির পরিবেশ বিরাজ করছে। জনগণ আশা করছে, এই আন্দোলনের ফলে সোঁয়াই নদী দখলমুক্ত হবে এবং এর স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করা যাবে। তবে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত না হলে তারা আরও বৃহত্তর গণআন্দোলনের ডাক দেবেন।
সোঁয়াই নদী রক্ষার আন্দোলনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে দখলদাররা আন্দোলনকে দুর্বল করার অপচেষ্টা করেছিল। কিন্তু প্রশাসনের পদক্ষেপ ও জনগণের সচেতনতার কারণে তাদের চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন কবে নাগাদ তাদের ঘোষিত খনন কাজ শুরু করে এবং অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়।