আজগর সালেহী, ব্যুরোচীফ চট্টগ্রাম।
চট্টগ্রাম : ভূজপুর থানার ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নাম—ওসি মোহাম্মদ ইসমাইল। একজন চৌকস, দক্ষ এবং মানবিক পুলিশ অফিসার হিসেবে তিনি নিজেকে যে উচ্চতায় তুলে ধরেছিলেন, তা আজও ভূজপুরবাসীর হৃদয়ে অমলিন।
থানা প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকেই অফিসার ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তিনি। অল্পদিনেই তার বিচক্ষণতা, ন্যায়পরায়ণতা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ভূজপুরের মানুষের মনে বিশেষ স্থান করে নেন। শুধু একজন পুলিশ কর্মকর্তা নয়, একজন অভিভাবক, একজন পথপ্রদর্শকের মতোই ছিলেন তিনি।
তার দায়িত্বকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলার এমন এক চিত্র ফুটে উঠেছিল, যা এখনো ভূজপুরের মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। বিশেষ করে এলাকার ছোটখাটো অপরাধীদের ধরে শাস্তির পরিবর্তে তাবলিগের চিল্লায় পাঠানোর যে অভিনব পদ্ধতি তিনি অনুসরণ করতেন, তা প্রশংসার দাবিদার। তার এই উদ্যোগ অনেক পথভোলা মানুষকে সঠিক পথে ফেরানোর সুযোগ করে দিয়েছিল।
আমি ব্যক্তিগতভাবেও তার সহযোগিতা পেয়েছি এক সংকটময় সময়ে। ২০১৩ সালে যখন জীবনের এক কঠিন অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন তিনি আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তার সহানুভূতি, পরামর্শ ও সহযোগিতা আমাকে নতুনভাবে জীবন গুছিয়ে নিতে সাহায্য করেছিল।
তার জনপ্রিয়তা এতটাই তুঙ্গে ছিল যে, বদলির আদেশ আসার পর এলাকাবাসী তাকে রাখার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু বিধির লিখন কে বদলাতে পারে? শেষমেশ যখন তাকে বিদায় নিতে হলো, তখন ভূজপুরের মানুষ ভালোবাসার স্মারক হিসেবে তাকে গোল্ড মেডেলসহ গণসংবর্ধনা দিলো—এটাই ছিল তার প্রতি মানুষের অকৃত্রিম শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ।
তার কর্মজীবন সাফল্যে ভরপুর ছিল। তিনবার পেয়েছেন পিপিএম (প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল), যা তার নিষ্ঠা ও দক্ষতার স্বীকৃতি। অবশেষে তিনি এসপি পদে উন্নীত হয়ে অবসরে গেছেন। কিন্তু তার স্মৃতি, তার কাজ, তার অবদান আজও ভূজপুরের গলি-ঘুপচিতে, মানুষের মনে জ্বলজ্বল করছে।
ওসি মোহাম্মদ ইসমাইল ছিলেন এক অনন্য প্রতিভাবান পুলিশ কর্মকর্তা, যিনি দায়িত্ব পালনকে শুধু চাকরি নয়, সেবার ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন। তার মতো মানুষের স্মৃতি চির অমলিন থাকে—সময়ের পরিক্রমায় আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
নিশ্চয়ই, প্রশাসনের অস্থিরতা নিরসনে ওসি মোহাম্মদ ইসমাইলের মতো সৎ, নিষ্ঠাবান ও অভিজ্ঞ অবসরপ্রাপ্ত অফিসারদের সীমিত সময়ের জন্য পুনর্নিয়োগ দেওয়া একটি কার্যকর উদ্যোগ হতে পারে। তাদের অভিজ্ঞতা, ন্যায়পরায়ণতা ও দক্ষ নেতৃত্ব প্রশাসনের স্থিতিশীলতা ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বিশেষ করে, যখন কোনো অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটে বা প্রশাসনের ভেতরে স্থবিরতা দেখা দেয়, তখন অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত অফিসারদের সাময়িকভাবে দায়িত্ব দেওয়ার মাধ্যমে দ্রুত শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা সম্ভব। পাশাপাশি, নতুন প্রজন্মের কর্মকর্তারা তাদের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে পারবেন, যা ভবিষ্যতে দক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো গঠনে সহায়ক হবে।
সরকার যদি এ ধরনের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে, তাহলে তা শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাতেই সহায়ক হবে না, বরং জনসাধারণের আস্থাও বাড়বে। সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের যথাযথভাবে কাজে লাগানো হলে প্রশাসন আরও কার্যকর, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক হয়ে উঠবে।
অবসরের এই সুন্দর সময়ে ওসি মোহাম্মদ ইসমাইল স্যার নিশ্চয়ই শান্তি ও পরিতৃপ্তির জীবন উপভোগ করছেন। তার সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু এবং মানসিক প্রশান্তি কামনা করছি। তিনি যেভাবে সততা, দক্ষতা ও মানবিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন, তেমনই আনন্দময় ও সুস্থ জীবন যেন তার সঙ্গী হয়। আল্লাহ তাকে সুস্থ রাখুন, সুখে রাখুন—এই প্রার্থনাই রইলো।