আজগর সালেহী, চট্টগ্রাম থেকে।
ফটিকছড়ির বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে এখন যেন হলুদের রাজত্ব। সর্ষে ফুলের দোলায় প্রকৃতি নিজেকে সাজিয়েছে অপরূপ সাজে, চারদিকে বইছে মৌ মৌ সুবাস। কৃষকের মাঠজুড়ে সোনালি সম্ভাবনার এই উৎসবে হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে। ফলন ভালো হওয়ায় তারা অধিক লাভের আশা করছেন।
সর্ষে আবাদে বৃদ্ধি ও সম্ভাবনা:
ফটিকছড়ি উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অনুকূল আবহাওয়া ও যথাযথ পরিচর্যার কারণে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর সরকারিভাবে উপজেলায় ১৬৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে, যা গত মৌসুমের তুলনায় ১০ হেক্টর বেশি। তবে বেসরকারিভাবে এ আবাদ দ্বিগুণ হবে বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
কৃষকের অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশা:
ফটিকছড়ি বিলের কৃষক মোহাম্মদ জুনাইদ বলেন, "আমি ৩৫ শতক জমিতে সরিষার চাষ করেছি। গত বছরের তুলনায় এবার ভালো ফলন হবে বলে আশা করছি।" হাসনাবাদ গ্রামের কৃষক আবু তাহের বলেন, "সরিষার ফলন ভালো হওয়ায় মাঠজুড়ে ফুলের বাহার। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কিছুদিন পরই সরিষা ঘরে তুলতে পারব।" বড় বেতুয়া গ্রামের কৃষক হানজালা বলেন, "আমি ৮০ শতক জমিতে সরিষা চাষ করেছি। ক্ষেতজুড়ে ভালো ফলনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।"
সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ দর্শনার্থীরা:
সর্ষে ফুলের অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে শুধু কৃষকরাই নন, সাধারণ মানুষও ছুটে আসছেন মাঠে। নাজিরহাট ডিগ্রি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. আশরাফ জামান বলেন, "সরিষার ক্ষেত প্রকৃতিতে যেন হলুদ আবরণ ছড়িয়ে দিয়েছে। সরিষার তেল ও খৈলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রকৃতিপ্রেমীরাও এ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন।" পারভেজ নামের এক দর্শনার্থী বলেন, "সুজলা-সুফলা সরিষার মাঠের সৌন্দর্য আমাকে আকৃষ্ট করেছে। তাই এখানে ঘুরতে এসেছি।"
সরকারি সহায়তা ও কৃষি কর্মকর্তাদের মতামত:
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, "এ অঞ্চলের মাটি সরিষা চাষের উপযোগী হওয়ায় দিন দিন এর আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকেরা সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন বলেই চাষের পরিমাণও বেড়েছে।" তিনি আরও জানান, কৃষি কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধান, সময়মতো কৃষি উপকরণ সরবরাহ এবং অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, "সরকার কৃষিকাজে প্রণোদনা ও কৃষকদের সর্বাত্মক সহায়তা দিচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে কৃষকেরা সর্বোচ্চ সুবিধা পান।"
সর্ষে চাষের এই সাফল্য শুধু কৃষকের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে না, বরং ফটিকছড়ির প্রকৃতি ও অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সরিষার সুবাসে ভরে ওঠা এই অঞ্চল কৃষি খাতের সম্ভাবনাকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে।