মাওলানা ইদ্রিস যুক্তিবাদী একজন বিজ্ঞ আলেম, উচ্চমানের আরবী সাহিত্যিক এবং শায়ের। তিনি আরবী, উর্দু এবং ফার্সী ভাষায় অসংখ্য কবিতা, নাতে রাসূল (সা.), বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তারানা রচনা করে অগণিত পাঠকের হৃদয় জয় করেছেন। তাঁর রচনাগুলো হৃদয়গ্রাহী, সহজবোধ্য এবং যুক্তিনির্ভর।
#পরিবার ও শিক্ষা জীবন:
মাওলানা ইদ্রিস যুক্তিবাদী একজন প্রখ্যাত কওমি আলেম পরিবারের সন্তান। তাঁর পিতা, মাওলানা আব্দুর রহমান সাহেব রহ., ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত কওমি মাদরাসা দারুল উলূম দেওবন্দের একজন কৃতী ছাত্র। বাবার হাত ধরেই তাঁর প্রাথমিক শিক্ষার সূচনা।
তিনি আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া ভূজপুর কাজিরহাট এমদাদুল ইসলাম মাদরাসায় লেখাপড়ার হাতেখড়ি নেন এবং সেখানেই জমাতে শাশুম পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে তিনি আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলূম বাবুনগর মাদরাসায় ভর্তি হন এবং ছাহারুম পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপরে জিরি মাদরাসায় ভর্তি হয়ে ১৯৭২ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন।
#বিশিষ্ট শিক্ষকগণ:
তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন আল্লামা শাহ ইউনুস আজিমপুরী রহ., আল্লামা ওবায়দুর রহমান রহ., আল্লামা ইউনুস হাটহাজারী রহ., আল্লামা হাফেজ আহমাদুল্লাহ (পটিয়া মাদরাসার শায়খুল হাদিস), এবং মুফতি নুরুল হক জিরি রহ., প্রমুখ।
#কর্মজীবন:
মাওলানা যুক্তিবাদী কর্মজীবন শুরু করেন যশোরের বিখ্যাত কওমি মাদরাসা দারুল উলূম মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে। পরে তিনি মিরসরাই থানার জামালপুর মাদরাসা, চট্টগ্রামের শোলকবহর মাদরাসা, হালশহর এহইয়াউল উলূম মাদরাসা, রাঙ্গুনিয়ার রানীরহাট ফাজিল মাদরাসা, এবং বনানী শাহ জামে মসজিদে খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
অসুস্থতার কারণে নিজ গ্রামে ফিরে এসে তিনি উত্তর চট্টগ্রামের বিখ্যাত আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া ভূজপুর কাজিরহাট এমদাদুল ইসলাম মাদরাসায় সিনিয়র মুহাদ্দিস হিসেবে যোগদান করেন এবং বর্তমানে সেখানেই কর্মরত আছেন।
#বিবাহিত জীবন:
১৯৭৫ সালে বাবুনগরের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা মুফতি ইউসূফ বাবুনগরীর কন্যার সঙ্গে তাঁর বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিবাহটি বাবুনগর মাদরাসার বার্ষিক মাহফিলের দিন মঞ্চে সম্পন্ন হয়েছিল। আকদ পড়িয়েছিলেন হাটহাজারী মাদরাসার মুহাদ্দিস আল্লামা শাহ আব্দুল আজিজ রহ. এবং দোয়া পরিচালনা করেছিলেন পটিয়ার হাজি সাহেব রহ.।
#সাহিত্য ও কাব্য প্রতিভা:
মাওলানা যুক্তিবাদী আরবী সাহিত্য ও কবিতায় অনন্য প্রতিভার অধিকারী। তিনি আল্লামা হারুন বাবুনগরী রহ., আল্লামা আব্দুল হালিম বোখারী রহ., আল্লামা নূর আহমদ রহ., এবং অন্যান্য বিশিষ্ট আলেমদের মৃত্যুতে আরবী মরছিয়া রচনা করে সবার প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে বাবুনগর মাদরাসার শতবার্ষিকীর তারানায়ে বাবুনগর এবং আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া ভূজপুর মাদরাসার আরবী পরিচিতি।
#বায়আত ও আধ্যাত্মিকতা:
তিনি প্রথমে আল্লামা হারুন বাবুনগরী রহ.-এর হাতে আধ্যাত্মিকতার দীক্ষা গ্রহণ করেন। তাঁর ইন্তেকালের পর পটিয়া মাদরাসার আল্লামা শাহ আলী আহমদ বোয়ালভী রহ.-এর নিকট রুজু করেন।
#উল্লেখযোগ্য সাথী:
তাঁর ছাত্রজীবনের সাথীদের মধ্যে যারা বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হাদীসের খেদমতে নিয়োজিত, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মাওলানা সিরাজুল ইসলাম যশোরী, মাওলানা শেখ আহমদ নোয়াখালী, মাওলানা বশির আহমদ চকরিয়া এবং মাওলানা নূর মোহাম্মদ কালুঘাট।
মাওলানা ইদ্রিস যুক্তিবাদী একজন প্রজ্ঞাবান আলেম, সাহিত্যিক ও যুক্তিবাদী বক্তা। ধর্মীয় বিষয়কে যুক্তিনির্ভর বিশ্লেষণের মাধ্যমে তিনি সাধারণ মানুষের কাছে সহজভাবে তুলে ধরার অনন্য দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।
লেখক: সাংবাদিক মাওলানা আসগর সালেহী
শিক্ষক, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।