মোহাম্মদ উল্লাহ, সেনবাগ উপজেলা প্রতিনিধি।
শবেবরাত (লাইলাতুল বরাত) ইসলাম ধর্মে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ রাত। এটি হিজরি বর্ষপঞ্জির ১৪ শা'বান রাতে পালিত হয়। "শবেবরাত" শব্দটি ফারসি থেকে এসেছে, যেখানে "শব" মানে রাত এবং "বরাত" মানে মুক্তি। অর্থাৎ, এটি "মুক্তির রাত" হিসেবে পরিচিত।
শবেবরাতের তাৎপর্য
শবেবরাতের রাতকে ইসলামে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিভিন্ন হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই রাতে আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন, রহমত বর্ষণ করেন এবং তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করেন।
১. গুনাহ মাফের রাত:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"আল্লাহ তাআলা শাবান মাসের পনেরোতম রাত তাঁর সৃষ্টিজীবের প্রতি দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।"
(ইবন মাজাহ: ১৩৯০)
২. রিজিক ও তাকদির নির্ধারণের রাত:
কুরআনে এসেছে: "এই রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়।" (সূরা আদ-দুখান: ৪)
তাফসিরবিদগণ বলেন, শবেবরাতের রাতে পরবর্তী বছরের জীবন-মৃত্যু, রিজিক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত লেখা হয়।
৩. নফল ইবাদতের বিশেষ সুযোগ:
রাসূল (সা.) শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেন এবং এবাদত-বন্দেগিতে অতিরিক্ত মনোযোগ দিতেন।
এই রাতে নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া ও জিকির করার বিশেষ ফজিলত আছে।
শবেবরাতের ফজিলত
১. গুনাহ মাফ হয় – যদি কেউ সত্যিকারের তওবা করে।
২. রিজিক ও তাকদির নির্ধারিত হয় – পরবর্তী বছরের ভাগ্য নির্ধারণ হয়।
3. আল্লাহর রহমত লাভের সুযোগ – দোয়া কবুলের রাত।
৪. কবরবাসীদের জন্য দোয়া করার উত্তম সময় – মৃত আত্মীয়-স্বজনদের জন্য মাগফিরাত প্রার্থনা করা হয়।
শবেবরাতের সুন্নত আমল
১. নফল নামাজ পড়া – সাধারণত ২, ৪, ৬, ৮ বা ১২ রাকাত পড়া হয়।
২. কুরআন তিলাওয়াত করা – সূরা ইয়াসিন, সূরা মুলক ও অন্যান্য সূরা পড়া যেতে পারে।
৩. তওবা ও ইস্তিগফার করা – নিজের গুনাহের জন্য ক্ষমা চাওয়া।
৪. দোয়া ও জিকির করা – বিশেষ করে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ", "আস্তাগফিরুল্লাহ" ও অন্যান্য দোয়া পড়া।
৫. রোজা রাখা – ১৫ শা'বান রোজা রাখা মুস্তাহাব (সুন্নত)।
৬. মৃত আত্মীয়দের জন্য দোয়া করা – কবর জিয়ারত করা যেতে পারে।
শবেবরাত সম্পর্কে ভুল ধারণা ও বিদআত
আলাদা কোনো নির্দিষ্ট নামাজ নেই – অনেকেই মনে করেন, ১০০ রাকাত নামাজ বা বিশেষ কোনো পদ্ধতি আছে, যা ভুল।
হালুয়া-রুটি খাওয়া জরুরি নয় – এটি সাংস্কৃতিক প্রচলন, ইসলামের অংশ নয়।
আতশবাজি ও উৎসব পালন করা বিদআত – ইসলাম এতে অনুমোদন দেয়নি।
শবেবরাত ক্ষমা ও রহমতের রাত। এই রাতে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা উচিত। তবে কুসংস্কার ও বিদআত থেকে দূরে থাকা জরুরি।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে শবেবরাতের ফজিলত অর্জন করার তৌফিক দান করুন, আমিন।