মো: জিহাদ হোসেন
উপজেলা প্রতিনিধি মতলব উত্তর চাঁদপুর।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসকসহ সহায়ক কর্মীর সংখ্যা কম। নেই গাইনি, সা'র্জারি ও কনসালটেন্ট ডাক্তার। এত সংকটের মধ্যেও প্রতিদিন গড়ে ৪০০ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে। ফলে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকরা রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
৩১ শয্যাবিশিষ্ট মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। সে অনুযায়ী অবকাঠামো নির্মাণ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম দেওয়া আছে। জনবল নিয়োগ নেই দীর্ঘদিন ধরে। ফলে অব্যবহৃত চিকিৎসা সরঞ্জামগুলো দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, ৩১ শয্যাবিশিষ্ট মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক-সার্জন মিলিয়ে জনবল থাকার কথা ২৫৪ জন। বর্তমানে গাইনি, সার্জারি ও কনসালটেন্ট চিকিৎসকসহ ৭৮টি পদ শূন্য রয়েছে।
চিকিৎসক-সার্জন মিলিয়ে ২৪ জন থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ১১ জন। এ ১১ জনের মধ্যেও বিভিন্ন কারনে অনুপস্থিত আছেন ৪ জন। কার্যত এ হাসপাতালে চিকিৎসায় নিয়োজিত ৭ জন চিকিৎসক। ৩৫ জন নার্স ও মিডওয়াইফারী বিপরীতে আছেন ৩১ জন। নেই প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক, স্টোর কিপার, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ও পরিসংখ্যানবিদ।স্যাকমো, টেকনোলজিস্টসহ অন্যান্য পদ শূন্য রয়েছে প্রায় ৩৩টি। এদিকে ৭৫ জন স্বাস্থ্য সহকারী থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ৪৫ জন। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চারজন জুনিয়র কনসালটেন্ট পদ আছে। কাগজে কলমে পূরণ আছে তিন জন। কিন্তু বাস্তবে আছে একজন। জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) ডা. তাসলিমা আফরোজ এর কর্মস্থল এ হাসপাতালে হলো তিনি প্রেষনে আছেন ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। জুনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যাসেমথেসিয়া)ডা. ইফতেখার শামীম কর্মস্থল এ হাসপাতালে হলো তিনি ১ আগস্ট ২০২২ সাল থেকে অন-উপস্হিত। মেডিকেল অফিসার(সাবসেন্টার)ডা. কামরুজ্জান প্রেষনে আছেন নারায়ণগঞ্জে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সিজারিয়ান অপারেশন শুরু হয়। জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) ডা. তাসলিমা আফরোজ প্রেষনে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চলে গেলে সিজারিয়ান অপারেশন ২৫ এপ্রিল ২০২৪ থেকে বন্ধ হয়ে যায়।সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ থাকায় সব প্রসূতিকে প্রাইভেট হাসপাতালে নিতে হয়।গাইনি ডাক্তার না থাকায় গর্ভবতী মায়েরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।এতে আর্থিক বিপদে পড়েন নিম্নমধ্যবিত্তরা।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজরা বলেন, রোগীর চাপ অনেক বেশি। ডাক্তার কম। ফলে ডাক্তাররা চাইলেও রোগীর জন্য বেশি সময় দিতে পারেন না। এছাড়া ডাক্তাররা যে ওষুধ লেখেন, তা হাসপাতাল থেকে সব সময় পাওয়া যায় না। বেশি ভাগ ঔষধ বাহির থেকে কিনতে হয়।চিকিৎসা সেবা নিতে আসা হানির পাড়ের বলেন, হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাও উন্নত হয়েছে। তবে টয়লেট এবং বাথরুমের পরিবেশ আরো ভালো হওয়া দরকার।গাইনি, সার্জারি ও কনসালটেন্ট চিকিৎসকসহ অন্যান্য পদগুলো শূন্য থাকায় রোগীরা পাচ্ছে না প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা। অনেক রোগী বাধ্য হয়ে ফিরে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এ কে এম আবু সাইদ বলেন, গাইনি চিকিৎসক না থাকায় জরুরি সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ রয়েছে। চিকিৎসক ও অন্যাণ একাধিক পদ শূন্য থাকায় কারনে রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। জনবল সংকটের বিষয়ে আমরা একাধিকবার কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লিখেছি। নানা সমস্যার মধ্যেও হাসপাতালটিকে রোগীদের জন্য সেবা বান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০ শয্যায় উন্নীত কার্যক্রম চালু হলে এলাকার মানুষ প্রয়োজন অনুযায়ী স্বাস্থ্য সেবা পাবে।