মো: রাসেল
জেলা প্রতিনিধি বান্দরবান।
তামাক নামক বিষপাতা চাষের জেলা হিসেবে শীর্ষস্থানে রয়েছে বান্দরবান জেলা। গতবছরের তুলনায় এ বছর এই বিষপাতার চাষ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ সেই সাথে কমছে জমির উর্বরতা এবং বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
জানাগেছে, তামাকজাত কোম্পানির প্রলোভনে ও অধিক মুনাফার আশায় তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন এঅঞ্চলের কৃষকেরা। তামাক উৎপাদনের আগেই কোম্পানিগুলোর বিক্রির নিশ্চয়তা, দর নির্ধারণে চাষিদের অতি লাভজনক হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে তামাক চাষ, আর কাজে আসছে না কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শ।
সরেজমিনে দেখা যায়,কয়েক বছর আগেও বান্দবানে যেসব এলাকায় আবাদি জমিতে ধান, গম, ভুট্টা, সরিষা ও আলুসহ বিভিন্ন আগাম জাতের সবজী চাষ করা হতো, সেসব জমিতে এখন তামাক চাষ হচ্ছে।বান্দরবানের জেলার ৭ উপজেলাসহ মাতামুহুরীর নদীর প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের জমি গুলোতে দিন দিন তামাক চাষ বেড়েই চলেছে । এসব তামাকের জমিতে বড়দের পাশাপাশি শিশুদের দিয়ে চলছে পরিচর্যার কাজ।
লামা উপজেলার কৃষকরা জানান, বান্দরবানে ৭ টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে লামা উপজেলা তামাকের চাষ বেশি হয়। আর এর কারণ, অন্যান্য ফসল চাষকরে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এবং শ্রমিকের অধিক মূল্য হওয়ায় তারা প্রতি বছর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে অধিক মুনাফার আশায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি জেনেও তারা তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছে। তারা আরো বলেন, সিগারেট কোম্পানির মাধ্যমে তামাক চাষীদের জন্য একর প্রতি জমিতে বিজ ও নগদ টাকা । সেই সঙ্গে ইসুবি সারের জন্য টাকা, সার আগাম দেওয়া হয়।
বান্দরবানের সিভিল সার্জন বলেন, তামাক চাষ ও সেবনে মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তামাক পাতার বিড়ি, সিগারেট, গুল, খইনি ও জর্দাসহ নানান ধরনের নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করায় বাড়ছে শ্বাসকষ্ট,স্টক, চর্ম , যৌন, ক্যানসারসহ নানা রোগ। তামাক চাষের কারণে কৃষকদের পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন শিশুসহ, সাধারণ মানুষ।
এ বিষয়ে লামা উপজেলা কৃষি অফিসার আশরাফুজ্জামান জানান এ বছর বান্দবানের জেলার ৭ টি উপজেলা মধ্য লামায় মোট ৬৭১ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ কারা হয়েছে। যা গতবছরের দ্বিগুণ বেশি জমিতে তামাক চাষ হয়েছে । তিনি বলেন, কৃষি জমি এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য তামাক চাষ মারাত্মক ক্ষতিকর।
আমাদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে লামা উপজেলায় তামাকের আবাদ নিরুৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগ মৌসুমের শুরু থেকেই বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, মাঠ দিবস, দলীয় আলোচনা, উঠোন বৈঠক ও মতবিনিময় সভার মাধ্যমে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করে আসছে। পাশাপাশি তামাকের বিকল্প ফসল হিসেবে জেলা পরিষদের অর্থায়নে কৃষককে চিনা বাদাম এবং ভুট্টা ফসলের বীজ সহ অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে। কৃষকদের তামাক চাষের প্রতি নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষকদের বিনামূল্যে তামাকের বীজ, সারসহ, বিনা সুদে ঋণ দেওয়া ও অধিক লাভজনক হওয়ায় কোন পরামর্শই কাজে আসছে না । যে কারণে তামাক চাষে আগ্রহী বেশি হচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষকরা।