মোঃ সামসুজ্জামান রিয়াদ , বদরগঞ্জ (রংপুর)
রংপুরের বদরগঞ্জে কৃষি জমির টপ সয়েল মাটি গিলে খাচ্ছে উপজেলার প্রায় ৬০টি ইটভাটা। ফসলি জমির মাটি গিলে খাওয়ায় ফসল উৎপাদনে হ্রাস পাচ্ছে। প্রশাসনের তেমন তৎপরতা না থাকায় কৃষি জমির মাটি কাটার প্রতিযোগিতা চলছে। কাঁচা টাকার লোভে পড়ে মাটি বিক্রি করলেও পরবর্তী ক্ষতির বিষয়টি ভাবছেন না কৃষকরা। তবে অভিযোগ আছে, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ইটভাটা মালিকরা কৃষি জমির টপসয়েল মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের ভাটায়। এতে কৃষি জমি রক্ষায় অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেলিনা আফরোজ।
বালু মহল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে ২০১০ বলা হয়েছে, বিক্রির উদ্দেশ্যে বলু বা মাটি উত্তোলনের ফলে কোন নদীর তীর ভাঙ্গনের শিকার হলে সেক্ষেত্রে বালু বা মাটি তোলা যাবে না। অন্যদিকে সেতু কালভার্ট বাঁধ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে ভালো উত্তোলন নিষিদ্ধ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বদরগঞ্জ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে কৃষি জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে ৭১টি ইটভাটা। একেকটি ইটভাটা নির্মান করা হয়েছে ৫ থেকে ১৫ একর পর্যন্ত কৃষি
আমরুলবাড়ি গ্রামের সুমন মিয়া বলেন, দুই বছর
আগে আমাদের জমির দুই পাশের দুই মালিক
তাদের জমির মাটি বিক্রি করেছেন ইটভাটায়।৪থেকে ৫ ফিট গভীর করে জমির মাটি কেটে নিয়ে
ইটপোড়ানো হলেও এবার ইটভাটার শেয়ার অংশিদারিত্বের দ্বন্দ্বের কারণে ১০-১২টি ইটভাটা বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৬০টির মত ইটভাটায় কাঁচা ইটপোড়ানো হচ্ছে। এসব কাঁচা ইট তৈরী করতে ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষি জমির টপসয়েল মাটি। প্রায় ৬০টি ইটভাটার মধ্যে ৫০টি ইটভাটার বৈষ কোনো কাগজপত্র নেই বলে জানা গেছে। জানা গেছে, একেকটি ইটভাটায় বছরে ৫০ লাখ থেকে ৮০ লাখ পর্যন্ত কাঁচা ইট তৈরী করে পোড়ানো হয়। একেকটি ইটের ওজন সাড়ে ৩ কেজির উপরে। উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মহেববুল ইসলাম বলেন, কৃষকরা কাঁচা টাকার লোভে পড়ে ৩ থেকে ৪ ফসলি জমির উপসয়েল মাটি বিক্রি করছেন। ইটভাটার মালিকরা ২ থেকে ৪ ফুট গভীর পর্যন্ত কৃষি জমির মাটি কিনে ইটভাটায় নিচ্ছেন। এতে জমি অনেকটাই নিচু হয়ে যাচ্ছে। এসব জমিতে বছরে শুধু দুইবার ধন ছাড়া আর কোনো সবজি উৎপাদন হয় না। সেখানে ধানেরও উৎপাদন তেমন হয় না। সরেজমিনে উপজেলা দামোদরপুর ইউনিয়নের আমরুলবাড়ি, চম্পাতলী, শেখেরহাট, বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বকশিগঞ্জ, রামনাথপুর ইউনিয়নের ঘাটাবিল এবং রাধানগর ইউনিয়নের পাঠানের হাট এলাকার কৃষি জমির টপসয়েল মাটি
কাটতে দেখা যায় ইটভাটা মালিকদের।
যাওয়ায় আমাদের জমি হুমকির মুখে রয়েছে। তবে ইটভাটায় মাটি বিক্রি করা জমির মালিক আব্দুল হামিদ বলেন, আগে আমার জমিতে করলা, সরিষা, আলু, আদাসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ হতো। ভাটায় মাটি বিক্রির পর থেকে সেই জমিতে ধান ছাড়া আর কোনো সবজি চাষ হয় না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেলিনা আফরোজা বলেন, জমির টপ সয়েল মাটি থাকে ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত। এই পর্যন্ত মাটি কেটে নেওয়ার কারণে জমির উর্বরতা শক্তি হারিয়ে যায়। এটি ফিরিয়ে আনতে ২০ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত সময় লাগে। তবুও আগের মত ফসল উৎপাদন হবে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান বলেন, 'আমরা কোথাও কৃষি জমির মাটি কাটার অভিযোগ পেলে অভিযান চালাচ্ছি। সম্প্রতি দু'একজনের জরিমানাও করেছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অবৈধ ইটভাটায় ইটপোড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ইট পোড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয় জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে। সেখান থেকে এবার কয়টি ইটভাটা অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তা জানি না।