সবুজ হাওলাদার, জেলা প্রতিনিধি বরগুনা:
আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের কুলাইরচর গ্রামের পঞ্চম শ্রেণির স্কুল পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে (১১) হত্যার হুমকি দিয়ে ধর্ষনের অভিযোগ পাওয়া গেছে ভাড়ায় মটর সাইকেল চালক মো. নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে (৪০)। নুরুল ইসলাম আমতলী পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের চান্দু গাজীর ছেলে। সে কুলাইরচর গ্রামের রফিক হাওলাদারের মেয়েকে চতুর্থ বিয়ে করে সেখানে ঘরজামাই থাকে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার সময় এ ধর্ষনের ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, ধর্ষিত মেয়েটির বাবা মা আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের রায়বালা গ্রামের বিবিসি নামের একটি ইট ভাটায় শ্রমিকের কাজ করেন। মেয়েটি হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের নানা বাড়ি থেকে পড়াশুনা করেন।
এবছর সে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার সকালে সে বাবা মা এবং অসুস্থ ছোট ভাইকে দেখার জন্য ইট ভাটায় আসেন। সারাদিন তাদের সঙ্গে কাটানোর পর রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার সময় প্রতিবেশী জামাই নুরুল ইসলামের (৪০) ভাড়ার মটরসাইকেলে তুলে বাড়ি পাটিয়ে দেন। বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় সড়কের এক নির্জন স্থানে নামিয়ে চালক নুরুল ইসলাম মেয়েটিকে ধর্ষন চেষ্টা করে। এসময় মেয়েটি তার সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে এবং বাধা দেয়।
এক পর্যায়ে নুরুল ইসলাম মেয়েটির মুখে তার গায়ের ওড়না ঢুকিয়ে দেয় এবং হত্যার হুমকি দিয়ে ধর্ষণ করে বাড়ির দরজার সামনে ফেলে পালিয়ে যায়। এবং এ ঘটনা কাউকে জানালে তাকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখান থেকে তুলে নিয়ে খুন করা হবে বলে শাসায়। ভয়ে ওই রাতে মেয়েটি এঘটনা কাইকে জানায়নি। পরের দিন বুধবার মেয়েটি তার শরীরের যন্ত্রনা সয্য করতে না পেরে ঘরে তার দাদীকে এঘটনা খুলে বলে। মেয়ের বাবা ধর্ষণের খবর পেয়ে বুধবার বিকেলে বাড়ি এসে মেয়েকে নিয়ে আমতলী হাসপাতালে আসেন। হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে প্রেরন করেন।
আমতলী হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. রাশেদ মাহমুদ রোকনুজ্জামান বলেন, শিশুটির শারিরিক অবস্থা পরীক্ষার জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে প্রেরন করেছি।
এঘটনা জানাজানির পর ধর্ষক নুরুল ইসলাম পলাতক রয়েছে। তাকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
ধর্ষিত মেয়েটি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, মোরে খারাপ কথা কওয়ার পর মুই ডাক চিক দেওয়া ধরছি হেইআর পর মোর গার ওড়না খুইল্যা মোহে ঢুকাউয়া দেয়। আবার মোরে খুন কইর্যা হালাইবে এই রহম ভয় দেহাইয়া মোর সাথে খারাপ কাম করে। মুই এইয়ার বিচার চাই।
মেয়েটির মা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, মোগো বাড়ির পাশের জামাই নুরুল ইসলাম। অরে বিশ্বাস কইর্যা ভাড়া টাহা দিয়া মাইয়াডারে বাড়ি পাডাইছি। হেইয়ার মধ্যে মোর মাইয়ার এরহম সর্বনাম হরছে। মুই অর ফাঁসি চাই।
মেয়েটির বাবা বলেন, মোরা স্বামী স্ত্রী দিন মজুর ইট ভাটায় কাম হইর্যা খাই। মাইয়াডা অর নানা বাড়ি থাইক্যা ফাইবে লেহা পড়া করে। অনেক দিন পর মাইয়াডায় আছে মোগে দ্যাখতে। রাইতে মোগো পরিচি বাড়ির পাশের জামাই নুরুই ইসলামের মটর সাইকেলে বাড়ি পাডাই হেইয়ার মধ্যে মোগো এরহম সর্বনাস করা অর ঠিক অয় নাই। মুই এইআর কঠিন বিচার চাই।
কুলাইরচর গ্রামের বাসিন্দা মো. চুন্নু মাতুব্বর বলেন, ধর্ষক নুরুল ইসলাম একজন খারাপ প্রকৃতির লোক। প্রতারনা করে বিয়ে করা এবং খারাপ কাজ করাই তার নেশা। আমাদের প্রতিবেশী রফিক হাওলাদারের মেয়ে পারভীনকে চতুর্থ বিয়ে করে শ্বশুর ভাড়ি ঘর জামাই থাকে। এর আগেও সে বিভিন্ন জায়গায় প্রতারনা করে ৩টি বিয়ে করেছে। আমরা এঘটনার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ধর্ষনের খবর পেয়ে মেয়েটিকে হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।